ভারত বাংলাদেশকে কীভাবে শোষণ করছে এবং কী কী সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে?
ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রেই বন্ধুত্বপূর্ণ। ভারতে বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশ। বাংলাদেশের তিন পাশের রয়েছে ভারত এক পাশে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পিছনে ভারতের প্রচুর অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত তাদের বর্ডার খুলে দিয়ে ভারতে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশর মানুষের জীবন বাচিয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং, সামরিক সাহায্য সহ মুক্তিযুদ্ধে শেষে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল। কিন্তু আজ ৫৩ বছর পর এসে কেন সে দেশের মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধিতা এত প্রবল হয়ে উঠল এবং কেন এই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারতকে শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করা শুরু করেছে আর কেনইবা ভারতের জনগণ বাংলাদেশের মানুষকে বেঈমান ও অকৃতজ্ঞ জাতি হিসাবে গণ্য করে সেগুলো খুজে বের করে আলোচনা করা একান্ত জরুরী। যদি এই আলোচনা গুলোর মধ্যে অনেক রাজনৈতিক, অর্থনৈতি ও ভৌগলিক স্বার্থ জড়িত থাকে। তাই ধৈর্য ধরে পড়ার অনুরোধ রইলো।
বাংলাদেশ-ভারত দ্বন্ধের উভয়ই পক্ষের একটি কমন সমস্যার বা কারণ নিচেই আলোচনা করা হলো :
ধর্মঃ বাংলাদেশ একটি মুসলিম মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ। এদেশের প্রায় 20 কোটি মানুষের মধ্যে 16-17 কোটি মানুষ হলো মুসলিম। অন্যদিকে ভারতে প্রায় 150 কোটি মানুষের মধ্যে 100+ জনসংখ্যাই হলো হিন্দু ধর্মের মানুষ। যার ফলে ধর্ম গত বিভিন্ন পার্থক্যের বিষয়ে নিয়ে প্রতিনিয়ত দুই দেশের মধ্যে তুমুল দ্বন্ধ লেগেই থাকে।
ধর্মের রাজনীতিঃ এই সমস্যাটি দুই দেশেই কম বেশি রয়েছে। বিশেষ করে ভারতে এই ধর্মের রাজনীতি হয়ে থাকে। ভারতের উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি (BJP) ক্ষমতায় টিকে আছে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির কারণে।বিজেপি (BJP) প্রতিনিয়ত ভারতের মানুষকে মুসলিম ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ঘৃনা ছাড়ানোর মাধ্যমে মুসলিমদের বাংলাদেশ ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে দ্বন্ধের ও ঘৃনার তৈরি করেছে। যার ফলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও ভারত ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে ঘৃনার সৃষ্টি হয়েছে। ভারত প্রতিনিয়ত ভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে ভারতের্ মুসলিমদের উপর অত্যাচার করে থাকে। মুসলিমদের মসজিদের নিচে মন্দির আছে উল্লেখ করে মসজিদ ভেঙ্গে থাকে। যার ফলে বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে ভারতে বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি হচ্চে। একই ভাবে বাংলাদেশে কোনো কিছু হলেই ভারতের মিডিয়া গুলো এটিকে অতিরঞ্জিত ভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে ভারতে মানুষকে বিষিয়ে তোলে।এবং প্রতিনিয়ত ভারতে মিডিয়া গুলোর মিথ্যাচারিতার জন্য প্রতিনিয়ত ভারতীয়দের মুখ থেকে বাংলাদেশ দখলের হুমকি শোনা যায়।
প্রথমে আমরা বাংলাদেশের পক্ষথেকে আলোচনা শুরু করি। প্রথমেই আমরা জানব ভারত বাংলাদেশকে কি কি দেয় নি বা কি কি থাকে ভারত বাংলাদেশকে বঞ্চিত করেছে।
১. পানি বণ্টন সমস্যাঃ
- তিস্তা নদীর পানি বণ্টন: তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চললেও এখনো কোনো চুক্তি হয়নি। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পানির সংকটে পড়ে।
- গঙ্গা নদীর পানি: ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের কারণে গঙ্গার পানিপ্রবাহ কমে যায়, যা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে নদীশুকিয়ে যাওয়া এবং লবণাক্ততার সমস্যা তৈরি করে।
২. বাংলাদেশ সীমান্ত হত্যাঃ
- ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) প্রায়শই বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সমালোচনা হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। নিচে কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হলো:
২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল: এই পাঁচ বছরে সীমান্তে ১৫৮ জন বাংলাদেশি বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছেন।
২০১৯ সাল: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, এই বছরে বিএসএফের গুলিতে ৩৭ জন এবং নির্যাতনে ৬ জনসহ মোট ৪৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
২০২০ সালের প্রথম ছয় মাস: জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সীমান্তে ২৫ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২১ জন বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।
২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল: বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সংসদে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, এই দশ বছরে সীমান্তে বিএসএফের হাতে মোট ২৯৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
- উল্লেখ্য, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিএসএফের হাতে ১,০৬৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
- সর্বশেষ, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে দুইজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
এই তথ্যগুলো বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সরকারি পরিসংখ্যান থেকে সংগৃহীত হয়েছে।
৩. বাণিজ্য বৈষম্য
- ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে ঘাটতি রয়েছে। ভারতীয় পণ্য সহজেই বাংলাদেশে প্রবেশ করে, কিন্তু বাংলাদেশি পণ্য ভারতে প্রবেশে নানা শুল্ক ও অশুল্ক বাধার মুখে পড়ে।ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের মধ্যে ভারতে বিপুল পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, তবে বাংলাদেশ অনেক সময় ভারতের প্রতি একতরফা ভাবে নির্ভরশীল থাকতে হয়। ভারতে বাংলাদেশি পণ্য প্রবাহের তুলনায় ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে অনেক বেশি প্রবাহিত হয়, যার ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শিল্প ও কৃষি ক্ষেত্র ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্প উৎপাদন এবং উৎপাদন খাতে ভারতীয় পণ্য নিম্নমানের মূল্য নিয়ে প্রবাহিত হয়, যা স্থানীয় শিল্পকে অনেকটাই দুর্বল করে দেয়। যার ফলে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের মনে ভারতের জন্য ঘৃণার সৃষ্টি হয়।
৪. নদী দখল ও নাব্যতা সমস্যা
- সীমান্তবর্তী নদীগুলোর একতরফা ব্যবস্থাপনা বা দখল করার অভিযোগ রয়েছে। ভারত উজানের দেশ হওয়ায় ভারত তাদের দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা প্রত্যেকটি নদীতে ভারতের অংশের মধ্যে বাধ দিয়ে রেখেছে। এর ফলে বাংলাদেশের নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস পায়।ভারতের যখন পানি স্বল্পতা দেখা দেয় বা শুকনার সময় ভারত বাধ বন্ধ করে রাখে। যার ফলে বাংলাদেশে নদী গুলো শুকনা থাকে। বাংলাদেশের ফসল চাষীদের ফসল চাষাবাদ করতে বিপাকে পড়তে হয়। আবার বন্যার সময় বা অতিবৃষ্টি হলে ভারত কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই বাধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে তলিয়ে দেয়। এই বন্যার ফলে বাংলাদেশকে প্রতিবছর বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির মূখে পড়তে হয়। বিভিন্ন ধাপে উপর মহলের বৈঠক ও আলাপ আলোচনার পরও এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়নি।
৫. ছিটমহল ও সীমানা সমস্যা (অতীতে)
- ২০১৫ সালে ছিটমহল সমস্যার সমাধান হলেও এর আগে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশি নাগরিকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন।
৬. অভিবাসী ও NRC ইস্যু
- ভারতের আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC) কার্যক্রমের ফলে বহু মানুষকে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরি করেছে।ভারত একটি বিশাল দেশ হওয়ায় বিভিন্ন সময় জীবিকার তাগিদে, কখনও অন্যায় ও দূর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে ভারতে পালিয়ে যায়, কেউ কেউ লেখাপড়া করে ভারতেই বসবাস করা শুরু করেছেন। NCR বা অভিবাসী ইস্যু নিয়ে প্রায়ই ভারতীয় রাজনৈতিক দল BJP বাংলাদেশকে হুমকি, ব্যঙ্গ ও নানা ভাবে কটাঙ্খ করে থাকে।ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষত আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ও ত্রিপুরায় "বাংলাদেশি অভিবাসী" নিয়ে অভিযোগ তুলেছে। এটি রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকদের সাথে ভারতের নিজস্ব নাগরিকদেরও হয়রানি করা হয়েছে।
৭. ট্রানজিট সুবিধা ও ভূ-রাজনৈতিক চাপ
- ভারত বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ত্রিপুরা ও উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে সহজে পণ্য পরিবহন করছে। তবে বাংলাদেশকে এই সহযোগিতার তুলনায় পর্যাপ্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না বলে সমালোচনা রয়েছে। ভারতে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে রেল ট্রানজিট নেওয়া সহ বিভিন্ন ভাবে ভারত বাংলাদেশের নিকট থেকে পরিবহন ও পন্য সুবিধা নিলেও ভারত বাংলাদেশকে তার সঠিক মূল্য বা তার পরিবর্তের সমান সুযোগ সুবিধা দেয়নি। কোথাও কোথাও ভারত একতরফ সুযোগ-সুবিধা গ্রহন করেছে।
৮. পরিবেশগত সমস্যা
- ফারাক্কা বাঁধ ও অন্যান্য বাঁধের প্রভাব: ভারতের নির্মিত বাঁধগুলো বাংলাদেশে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা দেয়। এতে নদীশুকিয়ে যাওয়া, ভূমিক্ষয়, এবং লবণাক্ততার সমস্যা তৈরি হয়।
- সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব: নদীর পানি ও পরিবেশগত ক্ষতির পাশাপাশি, সীমানা অঞ্চলে বন ধ্বংস ও জলাভূমি হ্রাস পেয়েছে।
৯. বৈষম্যমূলক রাজনৈতিক সহযোগীতাঃ
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রহমান কে হত্যা ভারতে শেখ হাসিনাকে দীর্ঘদিন ভারতে আবাসন সহযোগীতা প্রদান করে এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য সহযোগীতা প্রদান করেন।সেই থেকে শেখ হাসিনা কৃতজ্ঞাস্বরূপ ভারত মূখী আচারণ করে থাকেন।যাহা বাংলাদেশের মানুষের কাছে ঘৃণার সৃষ্টি করে থাকে।শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ক্ষমতা থাকা কালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তেমন কোন কার্যকলাপে সরোব ছিল না। হাসিনাকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য প্রায় সকল পন্থায় ভারত ব্যবহার করেছিলন। কিন্তু হাসিনা ছাত্র আন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া পর ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যা যা করা যায়, যেমন- দেশ দখলের অপপ্রচার, হুমকি, বৈদেশিক চাপ প্রদান ইত্যাদি, তাই তাই করছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে ভারতে এই সহযোগীতার না ধরে বসে আছে।ভারত বাংলাদেশে তার রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে, বিশেষ করে ভারতের সরকার বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনগুলোতে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে থাকে। ভারতের বিভিন্ন কার্যক্রম বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে থাকে, যেমন ভারতের সমর্থন বা পছন্দ অনুযায়ী বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর উপর প্রভাব প্রয়োগ করে থাকে।
১০. যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা হুমকি
- সীমান্তে চোরাচালান: গবাদি পশু, মাদকদ্রব্য, এবং অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।ভারতের কলকাতার অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিই এই চুরাচালানের সাথে জড়িত থাকে। সাথে সাথে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের অনেক দুর্নীতিগ্রস্থ অফিসার অর্থের লোভে এই সমস্যাকে দেখেও সমাধান করে না। যার ফলে উভয়দের দেশের মধ্যে এই সমস্যারটি সমাধান আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
- সন্ত্রাসবাদ দমন: দুই দেশের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমনে সহযোগিতা থাকলেও, উভয়পক্ষই একে অপরকে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে সন্দেহ করে। ভারতে প্রতিনিয়তই নানা অপ্রকার সন্ত্রাসগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের জনগণ হিসাবে অবিহিত করে বাংলাদেশকে অভিযুক্ত করে থাকে।
১১. সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বৈষম্য
- ভারতের কিছু রাজ্যে বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও ভাষার অবমূল্যায়ন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলের জনগণ সাংস্কৃতিকভাবে প্রভাবিত হয়।
১২. মৎস্য সম্পদ ইস্যু
- বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পরেও, মৎস্য আহরণ নিয়ে ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।কোনো কোনো সময় ভারত বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে থেকে বাংলাদেশী জেলেদের ধরে নিয়ে যায় এবং আটকে রাখে।
১৩. রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতার অভাব
- রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় ভারত প্রত্যক্ষ সহযোগিতা না করায় বাংলাদেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে ভারত যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
১৪. সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও প্রভাব
- ভারতের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রভাব বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর পড়ে। এছাড়া বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক কোন সমস্যা হলে সেই সমস্যাটাকে ভারতের মিডিয়াগুলো অতিরঞ্জিত মিথ্যা তথ্য সংযুক্ত করে প্রচার করে থাকে যার ফলে প্রভাব বেশির ভাগ সময় ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর পড়ে। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অভাব কখনো কখনো উস্কানি দেয়।
১৫. আন্তর্জাতিক মঞ্চে চাপ সৃষ্টি
- বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারত তার কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষা করার অভিযোগ রয়েছে।ভারত বাংলাদেশের থেকে বড় ও শক্তি শালী দেশ হওয়ায় প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের স্বার্থকে সঠিক ভাবে প্রদান করে না।বাংলাদেশ এবিষয়ে অন্যান্য শক্তিশালী দেশের সাথে যোগাযোগ করলে বা আন্তর্জাতিক ভাবে সমাধান করতে চাইলে ভারত তাদের কুটনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজের লাগিয়ে বাংলাদেশেকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে থাকে।
১৬. সমুদ্রসীমা বিরোধ (অতীতে)
- ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন ট্রাইব্যুনাল (ITLOS)-এর রায়ে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা হলেও, এর আগে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা ও সম্পদ আহরণের অধিকার নিয়ে বিরোধ ছিল। যদিও রায়ের মাধ্যমে এটি সমাধান হয়েছে, তবুও কিছু ক্ষেত্রে ভারতের আধিপত্যের অভিযোগ রয়ে গেছে।ভারত তাদের সামরিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার মধ্যে ঢুকে তাদের কার্যক্রম এবং বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়ে থাকে।
১৭. গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ
- বাংলাদেশ গঙ্গার পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। তবে ভারত এতে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে, কারণ এটি ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
১৮. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতার ভারসাম্যহীনতা
- ভারত থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানি করে, তবে বাংলাদেশের অভিযোগ, ভারত একতরফাভাবে শর্ত আরোপ করে। তাছাড়া ভারত বাংলাদেশের নদীগুলোর উপর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা করলেও এর পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
১৯. টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধ
- ভারতের মণিপুর রাজ্যে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক। এই বাঁধ নির্মাণ হলে সুরমা-কুশিয়ারার পানি প্রবাহ কমে যেতে পারে, যা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিবেশ ও কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
২০. ছিটমহলের পরবর্তী সমস্যা
- ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ের পরও, উভয় দেশে থাকা জনগণের পুনর্বাসন ও নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। ছিটমহলবাসীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, তারা উন্নত নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন না।
২১. বাণিজ্যপথ ও ট্রানজিট ফি নিয়ে বিরোধ
- ভারত বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করছে। তবে বাংলাদেশ এর জন্য পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক লাভ পাচ্ছে না বলে দাবি করে।
২২. সংখ্যালঘু নির্যাতন ও পারস্পরিক অভিযোগ
- উভয় দেশই একে অপরের ওপর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ তুলেছে। এটি কখনো কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২৩. বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিরোধ
- বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে ভারত আগ্রহী, তবে বাংলাদেশের কিছু অংশ মনে করে এটি দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
২৪. আঞ্চলিক পানি ব্যবস্থাপনায় অংশীদারিত্বের অভাব
- ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর যৌথ ব্যবস্থাপনায় ভারতের উদ্যোগ সীমিত। এটি বাংলাদেশের পানি অধিকার নিশ্চিত করার পথে একটি বাধা।
২৫. সীমান্ত সংক্রান্ত অপরাধ ও অবৈধ কার্যক্রম
- সীমান্ত এলাকাগুলোতে চোরাচালান, নারী ও শিশুপাচার এবং অন্যান্য অপরাধ বাংলাদেশের জন্য গুরুতর সমস্যা। ভারত এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
২৬. রেল ও সড়ক যোগাযোগ নিয়ে দেরি
- ভারত ও বাংলাদেশ একসঙ্গে বেশ কিছু রেল ও সড়ক যোগাযোগ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। যেমন, আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্প বারবার সময়সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে, যা অর্থনৈতিক সংযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে।
- তাছাড়া, অনেক সময় বাংলাদেশ অভিযোগ করে যে ভারতের দিক থেকে অর্থায়ন বা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিতে সময়মতো অগ্রগতি হয় না।
২৯. পানি দূষণ ও পরিবেশগত ইস্যু
- ভারত থেকে বয়ে আসা নদীগুলোতে শিল্প বর্জ্য এবং রাসায়নিকের কারণে বাংলাদেশের পানি দূষিত হচ্ছে। এতে কৃষি, মৎস্য সম্পদ এবং মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
- বিশেষত, ফারাক্কা বাঁধের কারণে নদীগুলোর পলি জমে নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে, যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
৩০. কৃষি সংকট ও চাষাবাদে প্রভাব
- ভারতের নানা বাঁধ এবং পানি ব্যবস্থাপনার কারণে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের কৃষি জমিতে পর্যাপ্ত সেচের পানি পাওয়া যায় না। আবার বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানির কারণে বন্যা দেখা দেয়, যা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে।
৩১. সীমান্তের অবৈধ বসতি স্থাপন
- সীমান্ত এলাকায় কিছু ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করে বসতি স্থাপন করার অভিযোগ রয়েছে। এতে সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় সম্পদের ওপর চাপ তৈরি হয়।
৩২. উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহী গোষ্ঠী
- ভারতের অভিযোগ, বাংলাদেশের কিছু সীমান্তবর্তী এলাকা উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও বাংলাদেশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং জঙ্গি দমনে সহযোগিতা করেছে।
৩৩. জলবায়ু পরিবর্তন ও নদীর দিক পরিবর্তন
- ভারতের বড় বাঁধ নির্মাণ এবং ভূমি ব্যবস্থাপনার ফলে অনেক নদীর দিক পরিবর্তন হচ্ছে, যা বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকাগুলোতে ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
৩৪. ভারতের গ্যাস এবং কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রভাব
- বাংলাদেশে ভারত নির্মিত কয়লা ও গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো পরিবেশের ক্ষতির কারণ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৩৫. জলপথ ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা
- ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবহারের চুক্তি থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে ভারতের পণ্য পরিবহনের জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য পরিবহন এই কারণে বাধার মুখে পড়ে।
৩৬. চুক্তি বাস্তবায়নে ধীরগতি
- দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অনেক চুক্তি (যেমন: তিস্তা চুক্তি) এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ভারতের তরফ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধীরগতি বা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
৩৭. পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রভাব
- বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকদের অবস্থান অনেক সময় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিতে প্রভাব ফেলে। এটি বিশেষ করে তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়েছে।
৩৮. বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় সীমাবদ্ধতা
- ভারত বাংলাদেশের অনেক পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও, কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা (Non-Tariff Barriers) আরোপ করে। এটি বিশেষ করে বাংলাদেশের কৃষি, টেক্সটাইল এবং তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টি করে।
৩৯. ভারত মহাসাগর ও আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা
- ভারত তার সামুদ্রিক প্রভাব বাড়াতে বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পে সরাসরি যুক্ত হতে চায়। তবে এর ফলে বাংলাদেশ আঞ্চলিক প্রভাবের ভারসাম্য (যেমন: চীন বা ভারতের প্রতি নির্ভরশীলতা) নিয়ে চিন্তিত।
৪০. মানব পাচার ও মাদক চোরাচালান
- সীমান্ত এলাকাগুলোতে মানব পাচার এবং মাদক চোরাচালান একটি বড় সমস্যা। ভারত ও বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহযোগিতা করলেও এটি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
৪১. চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে ভারতের উদ্বেগ
- বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন (যেমন: পদ্মা সেতু) এবং সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে। চীন থেকে অস্ত্র কেনা এবং প্রকল্পে চীনের অর্থায়ন ভারতের কৌশলগত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত মনে করে, এটি তার আঞ্চলিক প্রভাবকে দুর্বল করছে।
৪২. সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্য আদান-প্রদান
- সাইবার নিরাপত্তা এবং তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা সীমিত। সীমান্ত এলাকায় ডিজিটাল চোরাচালান, অনলাইন অপরাধ এবং তথ্য পাচার নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।
৪৩. বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সহযোগিতায় প্রতিযোগিতা
- ভারত ও বাংলাদেশ অনেক সময় একই প্রকল্পের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা চায়। এটি দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি করে।
৪৪. বাংলাদেশে ভারতের 'হিন্দি ভাষার' প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ
- ভারতের বিনোদন মাধ্যম (যেমন: হিন্দি সিনেমা ও সিরিয়াল) বাংলাদেশে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। কিছু অংশ মনে করে, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ভাষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
- ভারত অনেক সময় তার নিজস্ব শিল্পে ভর্তুকি দিয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দুর্বল করে। এটি বিশেষ করে কৃষি এবং তৈরি পোশাক খাতে বেশি অনুভূত হয়।
৪৬. রেলপথে পণ্য পরিবহনে অগ্রাধিকার নিয়ে বিরোধ
- ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেলপথে তার পণ্য পরিবহন সহজ করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই সুবিধা স্থানীয় অর্থনীতিতে খুব একটা অবদান রাখে না এবং শুধুমাত্র ভারতের সুবিধার জন্য ব্যবহৃত হয়।
৪৭. মৌলবাদ ও চরমপন্থা নিয়ে উদ্বেগ
- দুই দেশই সীমান্ত এলাকায় চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভারত মনে করে, বাংলাদেশের কিছু মৌলবাদী গোষ্ঠী ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। অন্যদিকে বাংলাদেশ মনে করে, ভারতের অভ্যন্তরীণ সাম্প্রদায়িক সমস্যা বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
৪৮. বিশ্বজুড়ে ভিসা সমস্যার জটিলতা
- ভারত-বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভ্রমণ ভিসা নিয়ে জটিলতা রয়ে গেছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী, রোগী এবং ব্যবসায়ীদের ভিসা পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।
- বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে ভারতকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। বিশেষ করে নির্বাচন এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যুতে ভারতের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক হয়।
৫০. আঞ্চলিক সংহতিতে দ্বিধা
- BIMSTEC এবং SAARC-এর মতো আঞ্চলিক সংস্থাগুলোতে ভারতের আধিপত্য নিয়ে বাংলাদেশের কিছু অংশের আপত্তি রয়েছে। ভারত তার স্বার্থরক্ষায় কখনো কখনো অন্যান্য সদস্য দেশের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়।
৫১. প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার অভাব
- ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দেশ। কিন্তু আন্তঃসীমান্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যৌথ উদ্যোগের অভাব রয়েছে।
৫২. অভ্যন্তরীণ নদীর বাঁধ নির্মাণ
- অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর ওপর ভারত একতরফা বাঁধ নির্মাণ করে, যা বাংলাদেশের পানি প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের নদী সংক্রান্ত সমস্যাগুলি একটি দীর্ঘকালীন বিষয় এবং জটিল কুটনৈতিক সমস্যা। ভারতের নানা প্রকল্প, যেমন ফারাক্কা বাঁধ, বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে রেখেছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, মেঘনা, গঙ্গা ও অন্যান্য নদীর পানি প্রবাহ ভারত নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি ও পরিবেশগত পরিস্থিতির উপর খুবেই খারাপ প্রভাব ফেলছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে পানির সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এতে কৃষি উৎপাদন ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।
৫৩. ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত অসন্তোষ
- সীমান্তে অভিবাসন সংক্রান্ত নীতি কঠোর হওয়ায় দুই দেশের নাগরিকদের জন্য যাতায়াত ব্যয়বহুল ও জটিল হয়ে দাঁড়ায়।
৫৪. নদী পাড়ে অবৈধ কার্যক্রম ও সংঘর্ষ
- সীমান্তের নদীগুলোতে মৎস্য আহরণ নিয়ে দুই দেশের জেলেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এটি মাঝে মাঝে কূটনৈতিক আলোচনার প্রয়োজন সৃষ্টি করে।
৫৫. বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক চাপ
- ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক সময় যুক্তরাষ্ট্র, চীন, এবং রাশিয়ার মতো বড় শক্তিগুলোর ভূ-রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ে। এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
৫৬. আঞ্চলিক পানিসম্পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব
কারণ:
বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রবাহিত ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদীর ওপর নির্ভরশীল। তবে ভারত অনেক ক্ষেত্রেই একতরফা পানি ব্যবস্থাপনার অভিযোগে অভিযুক্ত। যেমন:
- তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি এখনো ঝুলে আছে।
- ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর ভারতের বাঁধ প্রকল্প বাংলাদেশের পানির প্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে।
প্রভাব:
- এর ফলে বাংলাদেশের কৃষি, পানীয় জল সরবরাহ এবং নদীর উপর নির্ভরশীল জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
৫৭. সীমানা চিহ্নিতকরণ ও 'নো ম্যানস ল্যান্ড' নিয়ে বিরোধ
কারণ:
- কিছু জায়গায় সঠিক সীমান্ত চিহ্নিত না হওয়ার কারণে 'নো ম্যানস ল্যান্ড'-এ সংঘর্ষ ও জটিলতা দেখা দেয়।
- সীমান্ত এলাকায় জমি দখল এবং অবৈধ কার্যকলাপ বিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রভাব:
- সীমান্তের লোকজনের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে সংঘাত বাড়ে।
৫৮. নদীভাঙন ও পলির প্রভাব
কারণ:
- ভারত থেকে আসা নদীগুলোর পলি জমার ফলে নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে। এর সঙ্গে বাঁধ নির্মাণের প্রভাব মিলে নদীভাঙন তীব্রতর হচ্ছে।
প্রভাব:
- বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ কৃষি জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।
- হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে আর্থিক ও সামাজিক চাপে পড়ছে।
৫৯. বন সংরক্ষণ ও পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে মতভেদ
কারণ:
- সীমান্তের বনাঞ্চল এবং পাহাড়ি অঞ্চল দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের মেঘালয়, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা রাজ্যের বনাঞ্চলের বিস্তার বাংলাদেশের বনের ওপর চাপ তৈরি করে।
প্রভাব:
- বন ধ্বংস এবং বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হয়।
- চোরাই কাঠ পাচার এবং অবৈধ শিকার বাড়ে।
৬০. বাণিজ্য ঘাটতি ও শুল্কবাধা
কারণ:
- ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বরাবরই একপাক্ষিক। ভারত বাংলাদেশে প্রচুর পণ্য রপ্তানি করলেও বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি করতে গিয়ে শুল্ক ও অশুল্ক বাধার সম্মুখীন হয়।
প্রভাব:
- বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতির মুখোমুখি হয়।
- স্থানীয় শিল্প প্রতিযোগিতার মুখে টিকে থাকতে কষ্ট করে।
৬১. সন্ত্রাসবাদ দমন নীতিতে পার্থক্য
কারণ:
- ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় বিদ্রোহীদের জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ভারতের কিছু অভ্যন্তরীণ চরমপন্থী গোষ্ঠীর জন্য উদ্বিগ্ন।
প্রভাব:
- পারস্পরিক সন্দেহ এবং নিরাপত্তা হুমকি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে।
৬২. আঞ্চলিক করিডোর ও লজিস্টিক সুবিধা
কারণ:
- ভারত বাংলাদেশের ভূখণ্ড দিয়ে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে বিশেষভাবে আগ্রহী। তবে বাংলাদেশ মনে করে, এই সুবিধা থেকে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক লাভ নিশ্চিত করা হয়নি।
প্রভাব:
- বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে এই ইস্যুতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
৬৩. অভিবাসন ও অবৈধ বসতি স্থাপন
কারণ:
- বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে।
- ভারতের কিছু রাজ্যে বাংলাদেশিদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রভাব:
- দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
- নিরপরাধ মানুষের হয়রানি হয়।
৬৪. রোহিঙ্গা সংকট ও আন্তর্জাতিক চাপ
কারণ:
- ভারত রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সরাসরি সমর্থন দিতে সীমিত ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের চাপে থাকা অবস্থান ভারতকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে বাধ্য করছে।
প্রভাব:
- বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের কাছ থেকে আরও বেশি সহযোগিতা আশা করে।
৬৫. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অসমতা
কারণ:
- বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে। কিন্তু ভারতের অনেক প্রকল্প পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি করে এবং টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
প্রভাব:
- বাংলাদেশ তার নিজস্ব জ্বালানি সুরক্ষার বিষয়ে চাপে পড়ে।
৬৬. সামরিক সহযোগিতা ও আঞ্চলিক ভারসাম্য
কারণ:
- ভারত বাংলাদেশের সামরিক আধুনিকীকরণে সরাসরি যুক্ত হতে চায়। তবে বাংলাদেশ চীনসহ অন্যান্য দেশের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে ভারসাম্য রাখতে চায়।
প্রভাব:
- এর ফলে আঞ্চলিক কৌশলগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
৬৭. সামুদ্রিক সম্পদ ভাগাভাগি নিয়ে উদ্বেগ
কারণ:
- বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক সম্পদ (মাছ ধরা, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান) নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা থাকলেও কিছু বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।
- আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমা নির্ধারণ চুক্তির পরও বাংলাদেশের দাবি অনুযায়ী তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে ভারত আরও আগ্রাসী ভূমিকা নিচ্ছে।
প্রভাব:
- বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল (EEZ) ও সামুদ্রিক সম্পদ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয় এবং দুই দেশের সম্পর্কের ওপর চাপ পড়ে।
৬৮. অবকাঠামো প্রকল্পে প্রতিযোগিতা
কারণ:
- ভারত এবং চীন উভয়েই বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। ভারত চীনের উপস্থিতি সীমিত করতে চায়, যা বাংলাদেশের জন্য একটি জটিল সমীকরণ তৈরি করে।
প্রভাব:
- বাংলাদেশ দুই দেশের চাপের মধ্যে পড়ে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে বাধ্য হয়।
৬৯. সংস্কৃতি ও মিডিয়া নিয়ে বিতর্ক
কারণ:
- বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন, ভারতের মিডিয়া, বিশেষ করে হিন্দি সিনেমা ও টিভি সিরিয়াল, বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করছে।
- ভারতীয় চ্যানেলের প্রভাবকে অনেকেই সাংস্কৃতিক আধিপত্য হিসেবে দেখেন।
প্রভাব:
- বাংলাদেশে স্থানীয় সংস্কৃতি রক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, যা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সামাজিক স্তরে প্রভাব ফেলে।
৭০. বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তিতে অসম শর্ত
কারণ:
- ভারত থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানি করে। কিন্তু কিছু চুক্তি বাংলাদেশে উচ্চমূল্য এবং পরিবেশগত ক্ষতির কারণ বলে সমালোচিত।
প্রভাব:
- এই চুক্তিগুলো স্থানীয় অর্থনীতি এবং পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
৭১. দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের যাতায়াত
কারণ:
- সীমান্তের দুই প্রান্তের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষ অনেক সময় কাজের সন্ধানে সীমান্ত পার হয়।
- এই প্রবণতাকে দুই দেশের মধ্যে অভিবাসন ও নিরাপত্তার সমস্যা হিসেবে দেখা হয়।
প্রভাব:
- এটি সীমান্তে মানবপাচার এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায়।
৭২. স্থানীয় পানির উৎস ব্যবহার নিয়ে মতভেদ
কারণ:
- সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কিছু ছোট পানির উৎস আছে, যেগুলো দুই দেশের কৃষক ও বাসিন্দারা ব্যবহার করে। এসব উৎসের ব্যবহার নিয়ে প্রায়ই বিরোধ দেখা দেয়।
প্রভাব:
- দুই দেশের সীমান্তবর্তী জনগণের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং স্থানীয় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
৭৩. আঞ্চলিক পর্যটন নিয়ে অসহযোগিতা
কারণ:
- ভারত এবং বাংলাদেশ পর্যটনের ক্ষেত্রে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাইলেও ভিসা প্রক্রিয়া এবং পরিবহন সুবিধায় অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
প্রভাব:
- উভয় দেশের পর্যটন খাতের সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হয় না।
৭৪. নদী-পথে পণ্য পরিবহনের আধিপত্য
কারণ:
- ভারত বাংলাদেশের নদী পথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এতে তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রভাব:
- বাংলাদেশের কিছু অংশে ভারতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার অভিযোগ বাড়ে।
৭৫. সীমান্তের নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণ
কারণ:
- সীমান্তে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোরতা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর মতো ঘটনাগুলো বারবার সমালোচিত হয়েছে।
প্রভাব:
- সীমান্ত এলাকায় উভয় দেশের নাগরিকদের মধ্যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়।
৭৬. জলবায়ু উদ্বাস্তু সংকট
কারণ:
- জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ সীমান্তবর্তী এলাকায় উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারে। এটি ভবিষ্যতে বড় সংকট তৈরি করতে পারে।
প্রভাব:
- ভারত এই বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং কঠোর অভিবাসন নীতি প্রণয়ন করছে, যা বাংলাদেশে অসন্তোষ তৈরি করছে।
৭৭. ট্রানজিট ফি নিয়ে মতভেদ
কারণ:
- ভারত বাংলাদেশকে তার পণ্য পরিবহনে করিডোর হিসেবে ব্যবহার করছে। কিন্তু বাংলাদেশের দাবি, ভারত যথাযথ ট্রানজিট ফি দিচ্ছে না।
প্রভাব:
- বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ধারণা তৈরি হয় যে তাদের অর্থনৈতিক লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে।
৭৮. অবৈধ মাদক পাচার
কারণ:
- ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল, ইয়াবা, এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্যের চোরাচালান ঘটে।
প্রভাব:
- এটি উভয় দেশের যুব সমাজের জন্য সামাজিক এবং অর্থনৈতিক হুমকি তৈরি করে।
৭৯. সমুদ্র পরিবহন নীতিতে পার্থক্য
কারণ:
- ভারত ও বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। ভারত চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে চায়, কিন্তু বাংলাদেশ এর জন্য যথাযথ অর্থনৈতিক লাভ নিশ্চিত করতে চায়।
প্রভাব:
- এর ফলে সামুদ্রিক যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে বিলম্ব হয়।
৮০. আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অমিল
কারণ:
- আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুই দেশের অবস্থান সবসময় একমুখী নয়। যেমন: ভারতের কিছু বৈশ্বিক অবস্থান বাংলাদেশকে প্রতিক্রিয়াশীল করে তুলতে পারে।
প্রভাব:
- আন্তর্জাতিক ফোরামে উভয় দেশের পারস্পরিক সমঝোতায় ঘাটতি দেখা দেয়।
৮১. প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় ঘাটতি
কারণ:
- প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং উদ্ভাবনে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা সীমিত।
- ভারতের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশের সাশ্রয়ী অ্যাক্সেস কম।
প্রভাব:
- বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাত উন্নয়নে ধীরগতি হয় এবং ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ে।
৮২. নৈতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত মতভেদ
কারণ:
- কিছু ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশের বাজারে নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
- নকল পণ্যের চোরাচালান দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে নৈতিকভাবে জটিল করে তোলে।
প্রভাব:
- বাংলাদেশি ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং অবিশ্বাসের জন্ম হয়।
৮৩. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা
কারণ:
- দুই দেশের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন সময় বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য বা ভুয়া খবর ছড়ানো হয়।
- অনেক সময় এসব প্রচারণা ধর্মীয় বা জাতিগত উত্তেজনা বাড়ায়।
প্রভাব:
- এটি জনসাধারণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ককে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
কারণ:
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও, কিছু ঐতিহাসিক ইস্যু নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
- ভারতের কিছু সিদ্ধান্ত (যেমন ১৯৭১ সালের পর প্রত্যাহারের সময়কাল) নিয়ে বাংলাদেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
প্রভাব:
- দুই দেশের জনগণের মধ্যে ঐতিহাসিক আস্থার সংকট তৈরি হয়।
৮৫. ভৌগোলিক বিভাজনের বাধা
কারণ:
- ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোর। তবে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অবকাঠামো উন্নয়ন ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
প্রভাব:
- ভারতের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন এবং বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়।
৮৬. জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সীমান্তবর্তী চাপে সমস্যা
কারণ:
- বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত এলাকায় জনসংখ্যার চাপ তুলনামূলক বেশি।
- এই চাপে সেবা প্রদান, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ভূমি ব্যবস্থাপনায় সংকট দেখা দেয়।
প্রভাব:
- উভয় দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে দারিদ্র্য এবং অব্যবস্থাপনা বাড়ে।
৮৭. সামরিক মহড়ায় উদ্বেগ
কারণ:
- ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সামরিক মহড়া চালায়, যা বাংলাদেশের সীমানার কাছাকাছি হয়।
- বাংলাদেশের সেনা এবং কৌশলগত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি আঞ্চলিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রভাব:
- উভয় দেশের মধ্যে সামরিক আস্থা সংকট দেখা দেয়।
৮৮. উভয় দেশের সংবাদমাধ্যমের পক্ষপাতিত্ব
কারণ:
- ভারতীয় সংবাদমাধ্যম অনেক সময় বাংলাদেশের ইস্যুতে নেতিবাচক ধারণা প্রচার করে।
- একইভাবে, বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যম ভারতের বিষয়ে পক্ষপাতমূলক খবর প্রচার করে।
- জনগণের মধ্যে ভুল ধারণা এবং উত্তেজনা বাড়ে।
- ৮৯. সীমান্তবর্তী গ্রামীণ উন্নয়ন নিয়ে দ্বিধা
কারণ:
- সীমান্তবর্তী গ্রামীণ এলাকা উন্নয়নে দুই দেশের যৌথ প্রকল্পের অভাব রয়েছে।
- অনেক এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা উন্নয়নের জন্য দুই দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে দায়বদ্ধতা দাবি করেন।
প্রভাব:
- সীমান্তের জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান নিম্নমানের থাকে এবং উভয় দেশের সরকারের প্রতি অসন্তোষ বাড়ে।
৯০. খাদ্য নিরাপত্তায় বিরোধ
কারণ:
- কৃষি পণ্যের সীমান্ত বাণিজ্যে শুল্ক আরোপ বা আমদানি-রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
- বিশেষ করে চাল ও পেঁয়াজের বাণিজ্য নিয়ে প্রায়শই বিরোধ দেখা দেয়।
প্রভাব:
- দুই দেশের বাজারে খাদ্য পণ্যের দাম অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।
৯১. সমুদ্রপথে দূষণ
কারণ:
- ভারতীয় জাহাজ এবং শিল্পকারখানার কিছু দূষণ বাংলাদেশ উপকূলের পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে।
- বঙ্গোপসাগরে তেল নিঃসরণ এবং বর্জ্য ফেলা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।
প্রভাব:
- বাংলাদেশের সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র এবং মৎস্য খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৯২. ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
কারণ:
• বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার খবর ভারতকে উদ্বিগ্ন করে।
• একইভাবে, ভারতে মুসলমানদের নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মাঝে উদ্বেগ দেখা দেয়।
প্রভাব:
- ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় দুই দেশের পারস্পরিক সমঝোতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
৯৩. সীমান্তে বন্যপ্রাণীর সংকট
কারণ:
- ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণীর চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
- সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া এবং কৃষি সম্প্রসারণ এ সমস্যা আরও বাড়াচ্ছে।
প্রভাব:
- আঞ্চলিক জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে এবং উভয় দেশের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
৯৪. মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
কারণ:
- সীমান্তে গুলি চালানো, চোরাচালান নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা এবং আটক নিয়ে উভয় দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে।
প্রভাব:
- আন্তর্জাতিক মহলে দুই দেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৯৫. ভিসা প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা
কারণ:
- ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া অনেক সময় জটিল এবং সময়সাপেক্ষ।
- শিক্ষার্থী, রোগী এবং ব্যবসায়ীরা এতে বেশি সমস্যায় পড়েন।
প্রভাব:
- উভয় দেশের মানুষের যাতায়াত এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক বিনিময় ব্যাহত হয়।
উপসংহার:
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো কেবল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয়; সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এবং পরিবেশগত ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্যাগুলোর সমাধানে উভয় দেশের সরকারের পাশাপাশি নাগরিক পর্যায়ের আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
কথোপকথনে যোগ দিন