স্ট্রোক কি, এর লক্ষণ, , চিকিৎসা, প্রতিকার ও প্রতিরোধ
স্ট্রোক কি?
স্ট্রোক হলো একটি চিকিৎসাগত জরুরি অবস্থা, যা মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া বা রক্তক্ষরণের কারণে ঘটে, ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো অক্সিজেন এবং পুষ্টির অভাবে দ্রুত মারা যেতে শুরু করে।
স্ট্রোকের প্রকারভেদ ও তাদের আলাদা আলাদা পরিচয় বর্ণনা করো।
স্ট্রোক প্রধানত দুই প্রকারের হয়, এবং প্রতিটি প্রকারের আলাদা কারণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো হলো:
১. ইস্কেমিক স্ট্রোক (Ischemic Stroke):
• পরিচয়: ইস্কেমিক স্ট্রোক ঘটে যখন মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী কোনো রক্তনালী ব্লক হয়ে যায়। এটি সাধারণত রক্ত জমাট বাঁধা (থ্রম্বাস) বা রক্তনালীতে চর্বি জমে যাওয়ার (এথেরোস্ক্লেরোসিস) কারণে হয়।
• কারণ:
- রক্তনালীর ব্লকেজ
- চর্বি বা কোলেস্টেরলের জমা
- ধমনীর সংকীর্ণতা
• বৈশিষ্ট্য:
- এটি স্ট্রোকের সবচেয়ে সাধারণ ধরন (প্রায় ৮৭% ক্ষেত্রে ঘটে)।
- ধীরে ধীরে লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- মস্তিষ্কের কোনো নির্দিষ্ট অংশে অক্সিজেনের অভাবজনিত সমস্যা সৃষ্টি হয়।
২. হেমোরেজিক স্ট্রোক (Hemorrhagic Stroke):
- হেমোরেজিক স্ট্রোক ঘটে যখন মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালী ফেটে রক্তক্ষরণ হয়। এটি মস্তিষ্কের কোষে চাপ সৃষ্টি করে এবং রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে।
• কারণ:
- উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তনালী ফেটে যাওয়া
- মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক রক্তনালী (যেমন অ্যানিউরিজম)
- আঘাত বা দুর্ঘটনা
• বৈশিষ্ট্য:
- এটি তুলনামূলকভাবে কম সাধারণ (১৩% ক্ষেত্রে ঘটে)।
- হঠাৎ এবং তীব্র লক্ষণ দেখা দেয়।
- মাথার ভেতরে রক্তক্ষরণ মস্তিষ্কের কার্যক্রমকে দ্রুত বাধাগ্রস্ত করে।
উপ-প্রকার:
ইস্কেমিক স্ট্রোকের উপ-প্রকার:
1. থ্রম্বোটিক স্ট্রোক: মস্তিষ্কের রক্তনালীর ভিতরে রক্ত জমাট বাঁধা।
2. এম্বোলিক স্ট্রোক: অন্য কোনো অংশ থেকে জমাট বাঁধা রক্ত মস্তিষ্কে এসে ব্লক সৃষ্টি করে।
হেমোরেজিক স্ট্রোকের উপ-প্রকার:
- 1. ইনট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ: মস্তিষ্কের ভিতরে রক্তক্ষরণ।2সাব-অ্যারাকনয়েড হেমোরেজ: মস্তিষ্ক এবং মস্তিষ্কের চারপাশের ঝিল্লির মধ্যে রক্তক্ষরণ।
- ৩.ট্রান্সিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক (TIA) বা মিনি-স্ট্রোক:
পরিচয়:
- এটি একটি সাময়িক এবং অল্প সময়ের জন্য রক্ত সরবরাহ বন্ধ হওয়ার ঘটনা। সাধারণত এটি স্থায়ী ক্ষতি করে না, তবে এটি ভবিষ্যতে বড় স্ট্রোকের পূর্বাভাস হতে পারে।
• কারণ:
- ক্ষণস্থায়ী রক্তনালীর ব্লকেজ।
• বৈশিষ্ট্য:
- কয়েক মিনিট থেকে এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
- এটি স্ট্রোকের সম্পূর্ণ লক্ষণ দেখাতে পারে, কিন্তু কোনো স্থায়ী ক্ষতি হয় না।
উপসংহার:
ইস্কেমিক স্ট্রোক রক্তনালীর ব্লকেজের কারণে এবং হেমোরেজিক স্ট্রোক রক্তক্ষরণের কারণে ঘটে। এদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জীবন রক্ষা করতে পারে।
স্ট্রোক কেন হয়?
স্ট্রোক মূলত মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে ঘটে। এটি বিভিন্ন কারণ বা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণে হতে পারে। স্ট্রোকের প্রধান কারণগুলো হলো:
১. রক্তনালীর ব্লকেজ (ইস্কেমিক স্ট্রোকের কারণ):
• রক্ত জমাট বাঁধা (থ্রম্বাস):
- মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধলে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।
• চর্বি বা কোলেস্টেরলের জমা (এথেরোস্ক্লেরোসিস):
- ধমনীর দেয়ালে চর্বি জমে ধমনী সংকুচিত হয়ে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
• এম্বোলিজম:
- শরীরের অন্য অংশ (যেমন হৃদয়) থেকে রক্ত জমাট বাঁধা অংশ মস্তিষ্কে এসে রক্তনালী ব্লক করে।
২. রক্তনালী ফেটে যাওয়া (হেমোরেজিক স্ট্রোকের কারণ):
• উচ্চ রক্তচাপ:
- দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালীর দেয়াল দুর্বল করে, যা ফেটে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে।
• অ্যানিউরিজম:
- রক্তনালীর দেয়াল ফুলে যাওয়া বা দুর্বল হলে এটি ফেটে যেতে পারে।
• আঘাত বা দুর্ঘটনা:
- মাথায় আঘাতের কারণে রক্তনালী ফেটে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
৩. ট্রান্সিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক (TIA):
- এটি একটি সাময়িক ব্লকেজ যা বড় স্ট্রোকের পূর্বাভাস হতে পারে।
৪. অন্যান্য কারণ:
• হৃদরোগ:
- যেমন অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (হৃদস্পন্দনের অনিয়মিততা) রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়।
• ডায়াবেটিস:
- ডায়াবেটিস রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়।
• ধূমপান:
- ধূমপান রক্তনালীর দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ায়।
• মদ্যপান:
- অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তচাপ বাড়ায় এবং রক্তনালী দুর্বল করে।
• স্থূলতা:
- অতিরিক্ত ওজন রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল বাড়ায়, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ানোর কারণসমূহ:
- বয়স (৫০ বছরের বেশি হলে ঝুঁকি বাড়ে)।
- পারিবারিক ইতিহাস।
- উচ্চ কোলেস্টেরল।
- অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের অভাব।
- মানসিক চাপ ও দীর্ঘমেয়াদী উদ্বেগ।
উপসংহার:
স্ট্রোক মূলত রক্তনালী ব্লক বা ফেটে যাওয়ার কারণে ঘটে। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ধূমপান, এবং ডায়াবেটিস এর প্রধান কারণ। ঝুঁকি কমাতে সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ করা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
স্ট্রোকের লক্ষণ কি কি?
স্ট্রোকের লক্ষণ দ্রুত শনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাড়াতাড়ি চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে এবং ক্ষতি কমাতে সহায়ক। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ:
FAST পদ্ধতি:
এটি স্ট্রোকের সাধারণ লক্ষণ মনে রাখার সহজ একটি পদ্ধতি:
1. F (Face Drooping):
- মুখের এক পাশ ঢলে পড়া বা অবশ হয়ে যাওয়া।
- হাসতে বললে এক পাশের মুখ নড়াচড়া করতে না পারা।
2. A (Arm Weakness):
- একটি বা উভয় হাত দুর্বল হয়ে যাওয়া বা তোলার ক্ষমতা হারানো।
3. S (Speech Difficulty):
- অস্পষ্ট কথা বলা।
- কোনো কথা বলার সময় সমস্যায় পড়া।
4. T (Time to call emergency):
- সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
অন্যান্য সাধারণ লক্ষণ:
1. হঠাৎ দুর্বলতা:
- শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যাওয়া।
2. দৃষ্টি সমস্যা:
- একটি বা উভয় চোখে ঝাপসা দেখা বা সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যাওয়া।
3. হঠাৎ মাথা ঘোরা:
- ভারসাম্য বা সমন্বয় হারানো।
4. তীব্র মাথাব্যথা:
- কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই হঠাৎ এবং তীব্র মাথাব্যথা।
5. মনে করার ক্ষমতা হারানো:
- কথা বা পরিবেশ বুঝতে সমস্যা।
6. হাঁটার সমস্যা:
- হাঁটার সময় ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারা।
হেমোরেজিক স্ট্রোকের অতিরিক্ত লক্ষণ:
- বমি বা বমি বমি ভাব।
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
- মাথার ভেতরে চাপ অনুভব করা।
ট্রান্সিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক (TIA) বা মিনি-স্ট্রোকের লক্ষণ:
- এটি বড় স্ট্রোকের মতোই লক্ষণ দেখায়, তবে স্থায়ী ক্ষতি করে না।
- লক্ষণ কয়েক মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে চলে যেতে পারে।
উপসংহার:
স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত সাড়া দেওয়া রোগীর জীবন এবং মস্তিষ্কের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
স্ট্রোকের চিকিৎসা কি কি?
স্ট্রোকের চিকিৎসা রোগীর স্ট্রোকের ধরন (ইস্কেমিক বা হেমোরেজিক), স্ট্রোকের তীব্রতা, এবং মস্তিষ্কে ক্ষতির পরিমাণের উপর নির্ভর করে। এটি একটি জরুরি অবস্থা, তাই দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইস্কেমিক স্ট্রোকের চিকিৎসা (রক্তনালীর ব্লকেজের কারণে):
১. রক্ত প্রবাহ পুনঃস্থাপন:
• থ্রম্বলাইটিক ওষুধ (Clot-busting drugs):
- tPA (Tissue Plasminogen Activator) একটি সাধারণ ওষুধ যা রক্ত জমাট ভাঙতে সাহায্য করে। এটি স্ট্রোক শুরু হওয়ার ৪.৫ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হয়।
• মেকানিকাল থ্রমবেকটমি:
- বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে রক্তনালী থেকে ব্লক সরানো হয়।
২. অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট ও অ্যান্টিপ্লেটলেট থেরাপি:
- রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন বা হেপারিন ব্যবহার করা হয়।
৩. রিহ্যাবিলিটেশন:
- স্ট্রোকের পর শারীরিক, কথার, এবং মানসিক পুনরুদ্ধারের জন্য থেরাপি।
হেমোরেজিক স্ট্রোকের চিকিৎসা (রক্তক্ষরণের কারণে):
১. রক্তক্ষরণ বন্ধ করা:
• ওষুধ:
- রক্তচাপ কমাতে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে বিশেষ ওষুধ দেওয়া হয়।
• সার্জারি:
- ফাটা রক্তনালী মেরামত বা অতিরিক্ত রক্ত সরাতে সার্জারি করা হয়।
• ক্লিপিং বা কয়েলিং:
- অ্যানিউরিজম বন্ধ করতে রক্তনালীর মধ্যে একটি ক্লিপ বা কয়েল ব্যবহার করা হয়।
২. আইসিইউ সাপোর্ট:
- রোগীর মস্তিষ্কে চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং শারীরিক কার্যক্রম স্থিতিশীল রাখতে নিবিড় পরিচর্যা।
ট্রান্সিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক (TIA) বা মিনি-স্ট্রোকের চিকিৎসা:
• TIA-কে ভবিষ্যৎ স্ট্রোকের পূর্বাভাস হিসেবে ধরা হয়।
• ওষুধ:
- অ্যান্টিপ্লেটলেট ওষুধ (যেমন অ্যাসপিরিন) রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখতে ব্যবহৃত হয়।
• লাইফস্টাইল পরিবর্তন:
- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা।
পুনর্বাসন (Rehabilitation):
স্ট্রোকের পর পুনরুদ্ধার সময়সাপেক্ষ এবং এতে বিভিন্ন থেরাপি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:
1. শারীরিক থেরাপি:
- প্যারালাইসিস বা দুর্বল অঙ্গ পুনরায় চালু করতে।
2. কথা বলা ও ভাষা থেরাপি:
- কথা বলার সমস্যা দূর করতে।
3. মনস্তাত্ত্বিক থেরাপি:
- মানসিক চাপ এবং হতাশা মোকাবিলায় সহায়তা।
4. কগনিটিভ থেরাপি:
- স্মৃতি এবং চিন্তাভাবনা উন্নত করতে।
স্ট্রোক প্রতিরোধে ব্যবস্থাপনা:
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ।
- ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ।
- ধূমপান এবং অ্যালকোহল পরিহার।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও নিয়মিত ব্যায়াম।
উপসংহার:
স্ট্রোকের চিকিৎসা সময়মতো শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার উদ্দেশ্য রক্ত প্রবাহ পুনঃস্থাপন, রক্তক্ষরণ বন্ধ করা এবং মস্তিষ্কের ক্ষতি কমানো। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা এবং সঠিক নিয়ম মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।
স্ট্রোক থেকে মুক্ত থাকার উপায়?
স্ট্রোক থেকে মুক্ত থাকার জন্য জীবনযাত্রা এবং স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
১. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা:
- উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের প্রধান কারণ।
- রক্তচাপ নিয়মিত মাপুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করুন।
- লবণ কম খাওয়া এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
২. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা:
- ডায়াবেটিস থাকলে নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন।
- কম শর্করা ও ফাইবারযুক্ত খাবার খান এবং ব্যায়াম করুন।
৩. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা:
- ফলমূল, শাকসবজি, এবং আঁশযুক্ত খাবার বেশি খান।
- ট্রান্স ফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- লবণ ও চিনি গ্রহণ সীমিত করুন।
৪. ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করা:
- ধূমপান রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রক্তচাপ বাড়ায়।
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণ করা:
- অতিরিক্ত ওজন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন।
৬. নিয়মিত ব্যায়াম করা:
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
- হাঁটা, সাইক্লিং, বা সাঁতার কাটার মতো শারীরিক কার্যক্রম স্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৭. মানসিক চাপ কমানো:
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ রক্তচাপ বাড়ায়।
- ধ্যান, যোগব্যায়াম, বা শিথিলকরণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
৮. হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করা:
- হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা (যেমন অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন) চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ওষুধ গ্রহণ করুন।
৯. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
- উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, এবং ডায়াবেটিস নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
- চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করুন।
১০. অ্যালার্ম লক্ষণগুলো নজর রাখা:
- যদি স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ (যেমন, TIA বা মিনি-স্ট্রোক) দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
উপসংহার:
স্ট্রোক প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার, এবং রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কাদের সবচেয়ে বেশি?
স্ট্রোকের ঝুঁকি কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে বেশি থাকে, যারা বিভিন্ন শারীরিক এবং জীবনযাত্রার কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকিতে পড়ে। এই ঝুঁকির প্রধান কারণগুলো হলো:
১. বয়স:
- ৫০ বছরের বেশি বয়সী মানুষদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।
- বয়স বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রক্তনালীর সমস্যা ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যাগুলোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
২. পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ঝুঁকি:
- যদিও পুরুষদের মধ্যে স্ট্রোকের ঘটনা বেশি দেখা যায়, মহিলাদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি আরও বেশি হতে পারে, বিশেষ করে মেনোপজ পরবর্তী সময়ে।
- গর্ভাবস্থা, জন্মনিরোধক পিলের ব্যবহার, বা হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে মহিলাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
৩. পারিবারিক ইতিহাস:
- যদি পরিবারের কোনো সদস্য স্ট্রোক করে থাকেন, তবে সেই ব্যক্তির স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
- জিনগত কারণের কারণে কিছু মানুষ স্ট্রোকের জন্য বেশি সংবেদনশীল।
৪. উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন):
- উচ্চ রক্তচাপ হলো স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি।
- রক্তনালীতে অতিরিক্ত চাপ পড়লে তা ফেটে যাওয়ার বা ব্লক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৫. ডায়াবেটিস:
- ডায়াবেটিস থাকলে রক্তনালীগুলোর ক্ষতি হয় এবং এটি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
- ডায়াবেটিসের কারণে রক্তের শর্করা স্তরের অনিয়মিততা রক্তনালীর সমস্যা সৃষ্টি করে।
৬. ধূমপান:
- ধূমপান রক্তনালীর দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বাড়ায়।
- ধূমপান স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস।
৭. অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন:
- বেশি পরিমাণ অ্যালকোহল রক্তচাপ বাড়াতে পারে এবং রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
৮. স্থূলতা:
- অতিরিক্ত ওজন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, কারণ এটি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এবং কোলেস্টেরলের মতো শারীরিক সমস্যাকে উস্কে দেয়।
৯. হৃদরোগ এবং অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন (এট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন):
- হৃদরোগ এবং অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, কারণ এটি রক্ত জমাট বাঁধার সৃষ্টি করে এবং মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয়।
১০. শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা (অ্যাকটিভিটি না করা):
- শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়, কারণ এটি উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
১১. মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ:
- দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ রক্তচাপ বাড়াতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
১২. উচ্চ কোলেস্টেরল:
- উচ্চ কোলেস্টেরল রক্তনালীতে চর্বি জমতে দেয়, যা ব্লকেজ সৃষ্টি করতে পারে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
উপসংহার:
স্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি তাদের মধ্যে, যারা বয়স, পরিবারিক ইতিহাস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ওজন বৃদ্ধি বা অন্যান্য কারিগরি সমস্যা নিয়ে থাকেন। এই ঝুঁকিগুলো কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
কথোপকথনে যোগ দিন